মির্জাপুরে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়োগ বানিজ্যের পায়তারার অভিযোগ

সকাল বিডি ২৪ | চীফ রিপোর্টার: নিয়োগ বানিজ্যের পায়তারার অভিযোগ উঠেছে মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়নের বংশীনগর সূর্য্য তরুণ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে। বিদ্যালয়টির অফিস সূত্রে জানা যায়,বিদ্যালয়টিতে ৩ টি শূন্য পদ থাকায় গত ১৯ আগস্ট ২০২২ ইং তারিখে “দৈনিক ভোরের ডাক” ও “দৈনিক যুগধারা” পত্রিকায় একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।শূন্য পদ ৩ টি হল অফিস সহায়ক,আয়া ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী।অফিস সহায়ক পদে ৯ জন,আয়া পদে ৫ জন ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে ৭ জন আবেদন করেছে। আবেদন পত্র গ্রহণের শেষ দিন ছিল ২ সেপ্টেম্বর ২০২২।অফিস সূত্রে জানা যায়,৩ টি পদে মোট আবেদন করেছে ২১ জন প্রার্থী।

পরে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ইং তারিখে উক্ত নিয়োগ পরীক্ষার আবেদনকারীদের আবেদন পত্রের যাচাই-বাছাই করা হয়। যাচাই-বাছাই করেন যাচাই-বাছাই কমিটি।উক্ত কমিটিতে বহিরাগত ব্যাক্তিদের নিয়ে যাচাই বাছাই করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। যা নিয়ম বহির্ভূত এবং উক্ত কমিটির সদস্যরা এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন।উক্ত কমিটি যাচাই-বাছাই করে ২১ জন আবেদনকারীর মধ্যে ৪ জনের আবেদন অসম্পূর্ণ থাকলেও ২ জনের আবেদন বাতিল করেছে।বাকী ১৯ জনের আবেদন বৈধ বলে ঘোষণা করেন প্রধান শিক্ষক ও যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলে জানা যায়।পরে কমিটির অন্যান্য সদস্যরা স্বাক্ষর বিহীন ২ টি অসম্পূর্ণ আবেদনের কথা অভিযোগ করলেও তা পরে দেখা যাবে বলে জানান প্রধান শিক্ষক ও সদস্য সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।স্বাক্ষর বিহীন অসম্পূর্ণ ২ টি আবেদন পত্র হলো মো. মাসুদ মিয়া ও আনোয়ার হোসেন নামের আবেদনকারীর।গোপন তথ্যানুসারে জানা যায়, মাসুদ মিয়াকে অফিস সহায়ক পদে নিশ্চিত নিয়োগ দেবে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির একাংশ। বাকী দুই পদ নিয়েও চলছে বানিজ্য। যে বেশি টাকা দিবে তাকেই নাকি নিয়োগ দিবে কর্তৃপক্ষ। এমন গুঞ্জনে স্থানীয় ও বাকী আবেদনকারীদের মধ্যে রয়েছে নানান প্রশ্ন। তবে সকলের দাবি নিয়োগ যেন বৈধ হয়। অন্যথায় নিয়োগ বাতিল করা হয়।

অভিযুক্ত স্বাক্ষর বিহীন আবেদনকারী মাসুদ মিয়ার সাথে যোগাযোগ (+8801793635265) করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয় নি।

অভিভাবক ও যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন মুঠোফোনে জানান,যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। ২ টি আবেদন বাতিল করা হয়েছে। স্বাক্ষরবিহীন ২ টি অসম্পূর্ণ আবেদন আছে। আবেদনপত্র ২ টি তাৎক্ষণিক বাতিল করা হয় নি। তবে প্রধান শিক্ষক বলেছেন পরে বাতিল করা হবে।তিনি আরো বলেন, অবশ্যই ৪ টি আবেদন পত্র বাতিলযোগ্য।

কো-অপ সদস্য শাহজাহান ফিরুজ বলেন,যাচাই-বাছাই করে ৪ টি অসম্পূর্ণ আবেদন থাকলেও প্রধান শিক্ষক ২ টি বাতিল করেন।স্বাক্ষর বিহীন ২ টি অসম্পূর্ণ আবেদন পত্রের কথা অভিযোগ করলে তিনি বলেন, কম্পিউটার দিয়ে নাম লেখা আছে ত।প্রার্থীর নিজস্ব স্বাক্ষর না থাকলেও চলবে।

শিক্ষক প্রতিনিধি ও যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য আবু তারেক ও আজাহারুল ইসলাম বলেন, আমরা এ বিষয়ে কিছু জানিনা। তুমি (সাংবাদিক) প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বল!

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাক্তি বলেন,প্রধান শিক্ষক ও যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ফরিদুল ইসলাম আমাকে মোবাইল ফোনে বলেছেন যে,মিথ্যা কথা বলে কি লাভ! যে ২ টি অসম্পূর্ণ আবেদন পত্রে স্বাক্ষর বাকী ছিল, ঐ দুটিতে পরে সভাপতি তাদের ডেকে এনে স্বাক্ষর করিয়েছে।তিনি আরো বলেন, ৩ পদে নিয়োগে ১৫ লক্ষ টাকার বেশি লেনদেন হচ্ছে বলে গুঞ্জন উঠেছে। তিনি কর্তৃপক্ষের নিকট প্রশ্ন রেখেছেন, এত টাকা দিয়ে নিয়োগ, টাকাগুলো যাবে কোথায়?তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট সুদৃষ্টিও কামনা করছেন যেন,এরকম অনিয়ম না হয়।যে যোগ্য তাকেই যেন নেয়া হয়।

বিদ্যালয়টির একাধিক শিক্ষকদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন,নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে শুধু এতটুকু জানি।তাছাড়া আমরা এ বিষয়ে আর কিছু জানিনা। আমাদের সাথে এ বিষয়গুলো নিয়ে কোন সময় কেউ আলোচনা করে না।

বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. মন্টু মিয়া বলেন, যাচাই-বাছাই শেষ। ২ টি অসম্পূর্ণ আবেদন পুরোপুরি বাতিল করেছি এবং ২ টি স্বাক্ষর বিহীন অসম্পূর্ন আবেদন যদি চলে তাহলে আমরা পরে জানাব।কিন্তু লেনদেনের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন এবং স্বাক্ষর পরে নেয়ার কথাও তিনি অস্বীকার করেন।

প্রধান শিক্ষক ও যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন,যাচাই-বাছাই এখনো সম্পূর্ণ হয়নি।ঐদিন আমরা চা পান খাওয়ার মিটিং করেছি।তবে প্রাথমিকভাবে আমরা ২ টি অসম্পূর্ণ আবেদন বাতিল করেছি।বাকী ২ টি স্বাক্ষর বিহীন অসম্পূর্ণ আবেদনের বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলব।তিনি যদি বলেন আবেদন বৈধ তাহলে বৈধ। আর যদি তিনি বলেন আবেদন অবৈধ তাহলে অবৈধ।যাচাই-বাছাইয়ের পরে স্বাক্ষর নেয়ার কথা অস্বীকার করেন তিনি।পরে তার নিকট অসম্পূর্ণ আবেদনগুলো দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে অস্বীকার করেন এবং বলেন যদি শিক্ষা অফিসার দেখাতে বলেন তাহলে দেখাব।তিনি পরবর্তীতে স্বাক্ষর নিয়েছেন এমন কথা তিনি ফোনে বলেছেন এবং ফোন রেকর্ড আছে এমন কথা বললে তিনি বলেন,থাকতে পারে তবে কোন লেনদেন হয় নি।তার কাছে যাচাই-বাছাইয়ের দিনের রেজুলেশন খাতা চাইলে তিনি বলেন,খাতা অফিসে নাই! খাতা টাঙ্গাইল ডিজি অফিসে নিয়া গেছিলাম।খাতা এখন আমার বাড়িতে আছে।রেজুলেশন খাতা বাড়িতে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন উত্তর দেন নি!

উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. জুলফিকার হায়দার বলেন,আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি সম্পর্কে আমি জানিনা। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইন অনুযায়ী ব্যাবস্থা নেব।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হাফিজুর রহমান বলেন,আমি বিষয়টি জানিনা।তবে তদন্ত সাপেক্ষে আইন অনুযায়ী ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: Content is protected !!