![](https://www.sokalbd24.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা হাজার হাজার তরমুজের পসরা বসেছে মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর ফলের হাটে। ক্রেতা বিক্রেতাদের উপস্থিতিতে বেচাকেনা জমজমাট। হাটের ৯টি আড়তে বর্তমানে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ হাজার তরমুজ।
তবে রমজানকে কেন্দ্র করে যেন এখন চৈত্রের উত্তাপ পড়েছে তরমুজের দামে। কৃষক পর্যায়ে ভালো দাম না পেলেও কয়েকদিনের ব্যবধানে হাটে প্রতি পিস তরমুজে দাম বেড়েছে ৫০-৭০ টাকা পর্যন্ত। এতে বেপারী, আড়ৎদার লাভবান হলেও বিপাকে খুচরা ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ট্রলার, ট্রাক দিয়ে হাটের আড়তে আসছে বারি, ব্লাক জাম্বু, গ্রিন ডায়ামন্ড, মার্ভেলাসসহ নানা জাতের তরমুজ। চলছে ধুম বেচাকেনা। ওজনে ৩ থেকে ১৪ কেজির একেকটি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে সাড়ে ৪শ টাকা দামে। কৃষকপর্যায়ে দাম না পেলেও বাজারে ক্রমাগত বেড়েইে চলেছে মৌসুমি এই ফলের দাম।
মুক্তারপুরের আড়ৎদার ও বেপারী সূত্রে জানা যায়, গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে প্রতিপিস তরমুজে বেড়েছে ৫০-৭০ টাকা। আড়ৎদার-বেপারীরা জমিতে উৎপাদন কম আর পরিবহন খরচ বৃদ্ধির কথা বললেও খুচরা ব্যবসায়ীর বলছেন পাইকারি বেশি দামে কেনায় বিক্রি করতে হচ্ছে বেশি দামে। দাম বৃদ্ধিতে আড়ৎদারদের মধ্যে স্বস্তি দেখা গেলেও খুচরা বিক্রেতা ও ভোক্তারা পড়েছেন বিপাকে।
মো. আরিফ নামে আড়তের এক বিক্রেতা জানান, গত সপ্তাহে ৪ কেজি ওজনের প্রতি পিস তরমুজের দাম ছিলো ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। এ সপ্তাহে হয়েছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। ৮-৯ কেজি ১শ তরমুজ ছিলো ২৫ হাজার টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৫ হাজার টাকায়, ১১ কেজিরগুলো ছিলো ৩৫-৩৮ হাজার টাকা, এখন তা ৪৫ হাজার টাকা। মানুষের চাহিদা বেশি, তাই দামও বেশি।
পটুয়াখালী থেকে আসা এক বেপারী মো. নবাব আলী জানান, ১০ হাজার তরমুজ নিয়ে আসছি। হাজার টাকা শুধু ট্রলার ভাড়া। প্রতিটি তরমুজ নামাইতে আরও ৫ টাকা লাগে। এবার কৃষকদের উৎপাদন কম হয়েছে। এজন্য তাদের কাছ থেকেও বেশি দামে কিনতে হয়েছে। আর আর পরিবহন ভাড়াসহ সবকিছু বেশি। এজন্য বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
এর আগে আরো দুই ট্রলার তরমুজ আনছিলাম, দাম না পেয়ে আমার চার লাখ টাকার লোকসান হয়েছে। এখন একটু বাজার ভালো, যদি লাভের মুখ দেখি যোগ করেন তিনি।
হাটে আসা কৃষক রেজাউল বলেন, ৪ হাজার গাছের মধ্যে ২ হাজার গাছে তরমুজ হয়েছে। প্রথমে যারা বিক্রি করেছে তাদের লোকসান হয়েছে। শুনলাম দাম বাড়ছে, তাই নিয়া আসলাম। যদি ভালো দাম পাই।
মো. হাসান নামের আরেক বেপারী জানান, তরমুজ চাষে অনেক খরচ। প্রতি একরে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ বছর ফলন কম। দাম বৃদ্ধিতে এখন আশায় আছি কিছুটা লাভ হবে।
খুচরা বিক্রেতা জয়নাল বলেন, আমাদের পাইকারি কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। তাই খুচরা বাজারে বিক্রিও করতে হয় বেশি দামে। ৫শ টাকা দামের তরমুজ, এই তরমুজ তো গরিব মানুষ খেতে পারবে না। এগুলো বড়লোকের জন্য।
এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ ভোক্তা আধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আসিফ আল আজাদ জানান, ইতোমধ্যে মুক্তারপুরে তরমুজের বাজার পরিদর্শন করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের অযৌক্তিক মুনাফা অর্জন নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। তরমুজসহ অন্যান্য ফলের মূল্য তালিকা প্রদর্শন ও কোনোভাবে কেজি দরে তরমুজ না বিক্রি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেউ যদি নিয়ম অমান্য করে তাহলে জরিমানা করা হবে। বারবার নিয়মভঙ্গের প্রমাণ পেলে তার প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেওয়া হবে।
এদিকে কয়েকজন আড়ৎদার জানান, পটুয়াখালি, ভোলা, বরিশালসহ প্রায় ৪-৫টি জেলায় উৎপাদিত তরমুজ বিক্রি হয় মুক্তারপুর হাটে। বিক্রি মৌসুমে প্রতিদিন ক্রয়বিক্রয় ছাড়ায় অর্ধকোটি টাকা। এ হাট থেকে পাইকারি তরমুজ নিয়ে স্থানীয় বাজারসহ নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, নরসিংদী ও বিভিন্ন জেলার বাজারে বিক্রি করেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।