গফরগাঁও কলেজে ঢুকে শিক্ষকদের মারধরের প্রতিবাদে কর্মবিরতি

আশিকুজ্জামান মিজান | ময়মনসিংহ প্রতিনিধিঃ ময়মনসিংহের গফরগাঁও সরকারি কলেজে শিক্ষকদের মারধরের প্রতিবাদে সারাদেশে কর্মবিরতির ডাক দিয়ে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি। রোববার (১২ জুন) সরকারি কলেজের শিক্ষকরা দুপুর ১২টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী কর্মবিরতি পালন করা হয়

শনিবার (১১ জুন) সকাল ১০টার দিকে গফরগাঁও সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক কাজী ফারুক আহমেদ জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ৮ জুন দুপুর ১২টায় একাদশ শ্রেণির অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা চলাকালে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী সিমান্ত, রিবান, মুরাদ, সাব্বির হোসেন রিয়াদ, তানভীর ও সাব্বিরসহ বেশ কয়েকজন ক্যাম্পাসে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। কলেজের ক্যাশ শাখায় ঢুকে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয়। কলেজের ইসলামী শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. মুহাম্মদ ইমরান হোসাইন এবং পদার্থবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক, ড. মো. আবু রেজোয়ানকে মারধর করা হয়। গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোহাম্মদ আকতার হোসেনকেও গালাগালি ও মারধর করা হয়। পরীক্ষার হলে ঢুকে শিক্ষার্থীদেরও বের করে দেয়।

অধ্যাপক কাজী ফারুক আরও বলেন, ৯ জুন দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী শিক্ষকদের কলেজ ক্যাম্পাসে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশের সহায়তায় শিক্ষকরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। এ ঘটনায় গফরগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ পাওয়ার পরও পুলিশ কর্তৃপক্ষ আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
কেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মারধর করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারি বিধি অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ এবং সেশন ফি বাবদ পাঁচ হাজার ৬০০ টাকা ধার্য করা হয়েছে। এ টাকা রকেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জমা দেওয়ার কথা। কলেজের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করে এবং ব্যাংকে টাকাও জমা দিয়েছে। তবে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী টাকা জমা দেয়নি। ৮ জুন ক্যাম্পাসে আসে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মুরাদ হাসান ঝিনুক, সাব্বির হোসেন, সীমান্ত ও রিবান। তারা পরীক্ষা চলাকালে হলে প্রবেশ করে খাতাপত্র ছিনিয়ে নেয়। পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যোগ দিতে চাপ দেয়। পরে তারা কলেজের শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায় এবং মারধর করে।

এ বিষয়ে কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী জাকিয়া ফেরদৌস বলেন, ‘কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে বাপের বয়সী শিক্ষকের গালে থাপ্পড় দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে ছাত্রলীগ নেতারা। এ ঘটনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নেবে না।’
কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. আবু রেজোয়ান বলেন, ‘ঘটনার সময় শিক্ষার্থীদের বাধা দিলে আমার মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। পরে অবশ্য অন্যদের সহায়তায় মোবাইল উদ্ধার করি। পরে তারা অধ্যক্ষের কক্ষে গিয়ে ভাঙচুর চালায় এবং তাকে গালাগালি করে। আমি বাধা দিতে গেলে আমাকেও মারধর করে তারা।’

গফরগাঁও সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রিবান বলেন, ‘ফরম ফিলাপের টাকা বেশি নেওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে। তবে আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরা কোনো শিক্ষকের সঙ্গে অসদাচরণ করিনি।’

গফরগাঁও উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শরীফুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কলেজে কোনো ভাঙচুর চালায়নি। ফরম ফিলাপের টাকা বেশি নেওয়ার প্রতিবাদ করায় তাদের নামে থানায় মিথ্যা অভিযোগ করেছে।’

গফরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক আহমেদ আশিকুজ্জামান মিজান কে বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেটির তদন্ত চলছে। তবে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষকদের তালাবদ্ধ করে রাখার বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করি। এ সময় শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। ওই দিন সন্ধ্যার পর স্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে বসে মীমাংসার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বিষয়টি পরে জানানোর কথা জানান।

এ ঘটনায় এখনো মামলা বা কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি বলেও জানান ওসি।

এ বিষয়ে জানতে গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাজুল ইসলামের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: Content is protected !!