শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা ১৯৫ ছাড়িয়েছে

শ্রীলঙ্কায় তিনটি চার্চ ও তিনটি হোটেলে ভয়াবহ সিরিজ বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ১৩৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪৫০ জন। কলম্বোর ন্যাশনাল হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে হাসপাতালটির পরিচালক ডা. অনিল জাসিংহে হতাহতের এই সংখ্যা জানিয়েছেন। রবিবার খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ইস্টার সানডে উদযাপনকালে রাজধানী কলম্বো ও তার আশেপাশের তিনটি গির্জা এবং তিনটি হোটেলে এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। হতাহতদের মধ্যে বিদেশি পর্যটকেরাও থাকতে পারেন বলে দেশটির কর্মকর্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনও গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।

 

কলম্বোর কোচিচিকাদের সেন্ট অ্যান্থনি চার্চে প্রথম বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। দ্বিতীয় হামলাটি ঘটে কুতুয়াপিটায়ে-এর সেন্ট সিবাস্তিয়ান চার্চে দ্বিতীয় হামলা হয়। আর তৃতীয় বিস্ফোরণটি ঘটে নেগোম্বো শহরের বাত্তিকালোয়া চার্চে। এছাড়া কলম্বোর তিনটি পাঁচ তারকা হোটেলেও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় সময় আটটা ৪৫ মিনিটের দিকে ইস্টার সানডে’র অনুষ্ঠান চলার মধ্যে এসব বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

শ্রীলঙ্কার পুলিশ এসব হামলা ও প্রাণহানির সত্যতা নিশ্চিত করেছে। তবে ঠিক কী কারণে কারা এ হামলা চালিয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি। পুলিশ সূত্রকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে শুধুমাত্র নেগোম্বোতে বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে বাত্তিকালোয়া চার্চে নিহতের সংখ্যা ২৭ হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় বাসভবনের কাছে অবস্থিত সিনামন গ্রান্ড হোটেলের এক কর্মচারি বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন হোটেলের এক রেস্তরায় বিস্ফোরণ ঘটানো হলে অন্তত একজন নিহত হয়েছেন।

দেশটির নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলেছেন তারা বিস্ফোরণের বিষয়ে তথ্য খতিয়ে দেখছেন। প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে শিগিগরই জরুরি বৈঠকে বসবেন বলে জানিয়েছেন।

কলম্বোর সেন্ট অ্যান্থনি চার্চে প্রথম বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই বিস্ফোরণের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন বিস্ফোরণে পুরো ভবন কেঁপে ওঠে। দ্বিতীয় আরেকটি বিস্ফোরণ ঘটেছে রাজধানী কলম্বোর উত্তরে নেগোম্বো শহরের আরেকটি চার্চে। নিজেদের ফেসবুক পাতায় সাহায্য চেয়ে আবেদন করেছে ওই চার্চ কর্তৃপক্ষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে কুতুয়াপিটায়ে-এর সেন্ট সিবাস্তিয়ান চার্চের অভ্যন্তরণে ছিন্নভিন্ন ছাদের ছবি দেখা গেছে। মেঝেতে রক্ত পড়ে থাকার ছবিও দেখা গেছে।

সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দেশ শ্রীলঙ্কার মাত্র ছয় শতাংশ মানুষ ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। দেশটির দুই নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী তামিল ও সিংহলিজ উভয়ের মধ্যেই এই ধর্মাবলম্বীদের দেখতে পাওয়া যায়।

এক দশক আগে শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ অবসানের পর দেশটিতে বিক্ষিপ্ত সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের মার্চে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সিংহলি সম্প্রদায়ের সদস্যরা মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের মসজিদ ও সম্পত্তিতে হামলা শুরু করলে দেশটিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়।

 

 

রিপোটারি:–তানজির আহম্মেদ সানি তপদার

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: Content is protected !!