অসময়ে বৃষ্টিতে কৃষকের স্বপ্নভঙ্গ

সাগর বাদশা, ভোলা জেলা প্রতিনিধিঃ ভোলার সাত উপজেলায় এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও ভালো ছিল। বিগতদিনের লোকসান পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশায় ছিলেন কৃষকরা। তবে অসময়ের বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে গেছে ক্ষেতের ফসল। মুহুূর্তের মধ্যে কৃষকের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। ক্ষতি বেশি হয়েছে নিন্মাঞ্চল ও চরাঞ্চগুলোতে। ধানকেটে ক্ষেতে ফেলে রাখা হয়েছে। এখন আর ঘুরে দাঁড়াবার সম্ভাবনা নাই বলে হতাশ প্রকাশ করেন কৃষকরা। গতকাল শনিবার সরেজমিনে কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে এ তথ্য জানা গেছে।

চরফ্যাশনের কৃষক আলাউদ্দিন, লালমোহনের বাবুল, তজুমদ্দিনের খায়রুল, বোরহান উদ্দিনের মামুন, দৌলতখানের সিরাজ, সদরের সেলিমসহ কয়েকশত কৃষক জানান, চলতি আমন মৌসুমে কৃষকের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ফসলের ক্ষেতে এখন পাকা ধানের সমারোহ। কাটা-মাড়াইও শুরু হয়েছে। একর প্রতি ৪০ থেকে ৪৫ মন করে ফসল ঘরে তুলতে পারতেন কৃষকরা। ১০ দিনের মধ্যে সব ধান ঘরে তুলতে পারতেন। কৃষকের মুখে হাঁসি আর আনন্দে ভরা ছিলো। আশা ছিলো বিগতদিনের লোকসান পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। কিন্তু অসময়ের প্রবল বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে ক্ষেতের ফসল মাটির সঙ্গে মিশে গেছে, পচন ধরেছে ধানে। মেশিন দিয়ে অল্প খরচে ধান কাটা ও মাড়াই করার সুযোগ আর থাকছেনা। এখন পানির মধ্যে ধান। ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। শ্রমিক পাওয়া গেলেও মুজুরি দিতে হয় ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। তাও পুরো দিনে একজনে ৩ মন ধান কাটতে পারছে না।

ধানকেটে ক্ষেতে ফেলে রাখা হয়েছে। আর ধানের দামও কমে গেছে। পাইকারেরা ধান কিনতে চায় না। কিনলেও নগদ টাকা দেয়না। ধান বিক্রি করে পাইকারদের পিছু পিছু ঘুরতে হবে। সব মিলিয়ে অসময়ের বৃষ্টির কারণে (প্রাকৃতিক দুর্যোগ) কৃষকের মেরুদন্ড ভেঙ্গে গেছে, চিন্তিত হয়ে পরেছেন তারা। এখন অনেকেই ব্যাংক ও এনজিওর দেনা পরিশোধ নিয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। ব্যাংক নোটিশ দিয়েছেন দেনা পরিশোধ না করে মরবেননা এবং পরিবারকে ঝুঁকিতে ফেলবেননা। তাছাড়া কয়েক লাখ টাকা ব্যয় করে রবিশস্য, আলু, তরমুজ, মরিচ, পেঁয়াজ বীজতলা, সরিষাসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করেছে। পানি সব কেড়ে নিয়ে গেছে, দ্বিতীয়বার এ বছর আর এসব ফসল হবে না।

জেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি বছরে ভোলায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে। তার বিপরীতে আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৩৭৮ হেক্টর। যা থেকে ৫ লাখ ৭৪ হাজার ১০ টন চাল উৎপাদন হতো। কিন্তু অসময়ে প্রবল বৃষ্টির কারণে কিছু আমন, রবিশস্যের ক্ষতি হয়েছে। তাই ফসল কিছুটা কম হতে পারে। ক্ষতির পরিমান নিরুপনে কাজ চলছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: Content is protected !!