‘লাল কার্ড’ হাতে সড়কে শিক্ষার্থীরা

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনত শিক্ষার্থীরা রাস্তার কাজে দুর্নীতি ও লুটপাটে জড়িতদের ‘লাল কার্ড’ দেখানোর কর্মসূচি পালন করেছে।

শনিবার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত ঢাকার রামপুরা সেতুর উপর একদল শিক্ষার্থী ‘লাল কার্ড’ হাতে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে।

সমাবেশ থেকে রোববার দুপুর ১২টায় একই স্থানে সড়কে দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনীর কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

গত সোমবার রাতে রামপুরায় বাসের চাপায় এসএসসি পরীক্ষার্থী মো. মাঈনুদ্দিন নিহত হওয়ার পর প্রতিদিনই রামপুরা এলাকায় অবস্থান নিয়ে আসছে ওই এলাকার শিক্ষার্থীরা।

এই অবস্থানে নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকা খিলগাঁও মডেল কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, “সড়কে একের পর এক মৃত্যু কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আমরা বলতে চাই, এটা পুরো সিস্টেমের দোষ, যে সিস্টেমের মধ্যে ঘুষ আছে, যেই সিস্টেমের মধ্যে লুটপাট আছে।

“সড়ক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে রাষ্ট্রের যত কর্তৃপক্ষ জড়িত, সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষরা দুর্নীতিপরায়ন হয়ে উঠেছেন। যার ফলে আমরা দেখতে পাই রাস্তায় ফিটনেসবিহীন, লাইসেন্সবিহীন গাড়ি ও অপেশাদার চালক নিয়োগ দেওয়া হয়। গাড়ির চালকরা অনেক কষ্টে দারিদ্র্যের মধ্যে জীবন-যাপন করে থাকে। তাদের দারিদ্র্যের সুযোগ নিচ্ছে যারা, তারাই রাষ্ট্রে দুর্নীতি কায়েম করছে।”

দেশে সেতু বা সড়ক নির্মাণে বরাদ্দের ‘অর্ধেক অর্থ’ দুর্নীতি ও লুটপাট হয়ে থাকে দাবি করে সামিয়া বলেন, “দেশে কোনো ব্রিজ নির্মাণ হলে সেখানে যত কোটি টাকা বরাদ্দ হয়ে থাকে, এর অর্ধেক অর্থ লুটপাট হয়ে যায়। আমাদের দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হলে বছর যেতে না যেতে সেই রাস্তা ভঙ্গুর হয়ে যায়। সেখানে গাড়ি চলবে তো দূরের কথা, হাঁটার মতো অবস্থাও থাকে না।”

নিজেদের কর্মসূচির উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে তিনি তিনি বলেন, “সড়কের সাথে যে লুটপাট-দুর্নীতি হচ্ছে, সেই দুর্নীতিকে আমরা আজকে লাল কার্ড দেখাচ্ছি। আপনারা জানেন যে যখন মাঠে ফুটবল খেলা হয়, তখন খেলোয়াড়রা কোনো ভুল বা অন্যায় করলে রেফারি লাল কার্ড দেখায়, আমরা সেই রেফারির ভূমিকা পালন করতে চাচ্ছি।”

সমাবেশ শেষে দুপুর ১টার দিকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে একটি মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা দিনের কর্মসূচি শেষ করে।

তার আগে রোববারের মানববন্ধন ও ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন সামিয়া।

গত বৃহস্পতিবার পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছিল শিক্ষার্থীরা।

বাধা দেওয়ার সময় পুলিশ বলেছিল, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ‘বহিরাগতরা ঢুকে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে’ বলে তাদের কাছে খবর আছে।

এ বিষয়ে শুক্রবার শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি সোহাগী সামিয়া বলেন, “আমাদের ভেতরে যদি কোনো বহিরাগত ঢোকে, তারা যদি রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চায়, তাহলে আমাদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশের। আমাদের যৌক্তিক দাবিতে বাধা দেওয়ার অধিকার নাই।”

এরপর শুক্রবার সড়কে অবস্থান এবং শনিবার ‘লাল কার্ড’ প্রদর্শন কর্মসূচিতে পুলিশ কোনো বাধা দেয়নি।

সরকার বাসের ভাড়া বাড়ানোর পর থেকে শিক্ষার্থীরা আগের মত অর্ধেক ভাড়া দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নামে।

এর মধ্যে ২৪ নভেম্বর সিটি করপোরেশনের গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের এক শিক্ষার্থী এবং তারপর নাঈমউদ্দিন নিহত হওয়ার পর আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়।

ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতি মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার্থীদের ‘হাফ’ ভাড়ার দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা আসে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে।

তাদের দাবি, কেবল ঢাকা মহানগরে নয়, ‘হাফ’ ভাড়া চালু করতে হবে সারা দেশে এবং সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টার বদলে তা হতে হবে ২৪ ঘণ্টার জন্য।

তবে এখন নিরাপদ সড়কের দাবিটিই মুখ্য হয়ে উঠেছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: Content is protected !!