প্রথম বর্ষ থেকে বৈধ সিটের দাবিতে ছাত্র-শিক্ষক উন্মুক্ত আলোচনা

ঢাবি প্রতিনিধি:

বুধবার সকাল ১১টায় অপরাজেয় বাংলায় গণরুম-গেস্টরুমে নির্যাতন নিপীড়ন বন্ধ এবং প্রথম বর্ষ থেকে বৈধ সিটের দাবীতে ছাত্র-শিক্ষক উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এর ভিপি নুরুল হক নূর। তিনি ছাত্রের বিভিন্ন সমস্যা ও নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০/১০/১৯ ইং তারিখে ‘দৈনিক সংবাদ’ পত্রিকায় গত ৭ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ২৮২ জন শিক্ষার্থীর নির্যাতিত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে।
এছাড়া গত ০৯/১০/১৯ ইং তারিখে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ১২১ নং কক্ষ থেকে অস্ত্র ও মাদকসহ ২ জনকে গ্রেফতার, ০৯/০৯/১৯ ইং তারিখে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের প্রটোকল না দেওয়ায় ও গেস্টরুমে উপস্থিত না হওয়ায় সূর্যসেন হলের ৩২ জন শিক্ষার্থীকে রাতভর কক্ষের বাইরে রেখে ৪টি কক্ষে তালা দেওয়া, ২৫/০৭/১৯ ইং তারিখে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ২৪ জন শিক্ষার্থীকে ২১২ নং কক্ষে মারধর এবং ১৫/০৭/১৯ ইং তারিখে মাস্টারদা সূর্যসেন হলের ২৩৭ নং কক্ষে শিক্ষার্থীদেরকে গেস্টরুমে নির্যাতনের জেরে একজনকে শারীরিকভাবে আঘাত(কামড়) দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।

এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সাথে দেশের স্বার্থ বিরোধী চুক্তি নিয়ে সরকারের সমালোচনা করে ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে গত ০৬/১০/১৯ ইং তারিখে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের অাবাসিক শিক্ষার্থী অাবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

ভিন্নমতের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীদের উপর বিভিন্ন সময়েই ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নির্যাতন-নিপীড়ন,মারধর ও হল থেকে বের করে দেওয়ার মতো অসংখ্য ঘটনা ঘটছে। বিভিন্ন হামলা, হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার না পাওয়ার অভিযোগটি শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের।

এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ পরিবেশ ও অাবাসিক হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক /শঙ্কা তৈরি হয়েছে।আবাসিক হলগুলোতে অছাত্র ও বহিরাগতদের অবস্থানের পাশাপাশি বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন কতৃর্ক শিক্ষার্থীদের হলে উঠানো, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য করা, ভিন্নমতের কারণে হয়রানি, টর্চার সেলে নির্যাতনের বিষয়টি গণমাধ্যমে অসংখ্যবার উঠে এসেছে। যে কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে অছাত্র ও বহিরাগত উচ্ছেদ এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে অাবাসিক হলগুলোতে অভিযান পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করেছেন।

গত ০৯/১০/১৯ইং তারিখে উপাচার্যের সভাপতিত্বে প্রভোস্ট কমিটির মিটিংয়ে ১ম বর্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের প্রশাসনিকভাবে সিট প্রদান ও মাস্টার্স শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে হলত্যাগের একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সহিত বলতে হয়, এ ধরনের অনেক উদ্যোগই শিক্ষার্থীদের চাপে নেওয়া হলেও পরবর্তীতে সেগুলো বাস্তবায়ন করা হয় না।

গত ৩১/০৩/১৯ ইং তারিখে এস.এম হলে শিক্ষার্থীদের অছাত্র ও বহিরাগত উচ্ছেদের অান্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাধ্যক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার অাশ্বাস দিলেও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি নিরসনে অদ্যবধি দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।

দীর্ঘ ২৮ বছর পর শিক্ষার্থীদের অধিকার অাদায় ও দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলার অন্যতম প্ল্যাটফর্ম ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ’ (ডাকসু) নির্বাচন হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও অাবাসিক হলগুলোর সার্বিক অবস্থা নিয়ে অামরাও অন্যান্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ন্যায় খুবই উদ্বিগ্ন।
তাই উপর্যুক্ত সমস্যাগুলো নিয়ে মুক্ত অালোচনা ও কার্যকর সমাধানের লক্ষ্যে সকল ছাত্রদের এক হতে হবে।

উক্ত আলোচনা সভায় বক্তব্য প্রদান করেন, বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরকার সমাধানযোগ্য সব সমস্যার সমাধান পর্যায়ক্রমে করতে হবে। এর জন্য দল-মত নির্বিশেষে সকলের সদিচ্ছা, দূরদর্শিতা ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা দরকার।

অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম.এ আকাশ বলেন, বৈধ সিট ছাত্রদের অধিকার। কিন্তু বর্তমানে ছাত্রলীগের গণরুম-গেস্টরুমে নির্যাতনের কারণে ছাত্রদের পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য সবাইকে এক হতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমরা ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে চাই না। আমরা ছাত্র সন্ত্রাস এবং গণরুম-গেস্টরুমের নির্যাতন বন্ধ করতে চাই। তিনি আরো বলেন, প্রথম বর্ষ থেকে ছাত্রদের বৈধ সিট দিতে হবে, প্রতিটি হলে সিসিটিভি নিশ্চিত করতে হবে, প্রতিটি হলে হট লাইন প্রধান করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শাহ জাহান বলেন, গণরুম-গেস্টরুমে নির্যাতনের কারণে একজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হবে। ক্লাস না করে ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম করতে বাধ্য করা হয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: Content is protected !!