লিটন কুমার দাসরা এক মাসের বেশি সময় ধরে শ্রীলঙ্কা আছেন। তিন সংস্করণে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে লেগে গেছে ৩৫ দিন। এই লম্বা সময়ের ঘটনাবহুল সফরে ক্রিকেটারদের নানা প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। টেস্ট সিরিজ শেষে নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়া, গল টেস্ট ম্যাচ ড্র করার জন্য খেলা, কলম্বো টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হারা ছিল একটি অধ্যায়। আবার প্রথম ওয়ানডেতে ৫ রানের ব্যবধানে ৭ উইকেটের পতন, সেখান থেকে দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতায় ফেরা। প্রথম টি২০ ম্যাচে চারজন ওপেনার খেলিয়ে বিতর্কের জন্ম দেওয়ার রেশ এখনও বিদ্যমান। এর ভেতরে ক্রিকেটারদের সঙ্গী হয়েছে একটি ওয়ানডে ও একটি টি২০ ম্যাচ জয়ের আনন্দ। এই মিশ্র অনুভূতি নিয়ে আজ কলম্বোতে শেষ টি২০ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। শেষটা জয় দিয়ে করা গেলে সমর্থকদের পেছনের হতাশার ক্ষতে একটু হলেও প্রলেপ দেওয়া সম্ভব হবে।
গতকাল ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন সেই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেন। অলআউট ক্রিকেট খেলে সিরিজ জিতে দেশে ফিরতে চান তারা।
বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে শেষে হতাশ করেছে। পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামের ব্যাটিং স্বর্গে দলীয় ব্যর্থতার প্রদর্শনী দেখতে হয়েছে সমর্থকদের। লিটনরা জিতলেই খুশি হবেন দর্শক। ডাম্বুলায় যেভাবে দলীয় পারফরম্যান্সের প্রদর্শনী হয়েছে কলম্বোর ম্যাচটি সেভাবে খেলতে পারলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ নিজেদের করে নেওয়ার সুযোগ থাকবে। মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের মতে, ‘শেষ ম্যাচটি যেভাবে খেলেছি, আমার মনে হয় তাতে ছেলেরা ভালো ছন্দ পেয়েছে। আত্মবিশ্বাসটা ফিরে এসেছে। আশা করব, এখানে সিরিজটা ভালোভাবে শেষ করার।’
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথম টি২০ ম্যাচ জিতেছিল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে। দ্বিপক্ষীয় সিরিজে প্রথম জয় এসেছিল শ্রীলঙ্কায়। ২০১৭ সালে জয়ের সেই ম্যাচটি ছিল আজকের ভেন্যু প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে। সেটি আবার মাশরাফি বিন মুর্তজার আন্তর্জাতিক টি২০ থেকে বিদায় নেওয়ার ম্যাচও। ওই জয়ের পর থেকে টি২০ ম্যাচে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার মধ্যে ভালোই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। শেষ ১২ ম্যাচের পাঁচটি জয় লিটনদের। তিন জাতি নিদাহাস ট্রফি টি২০ টুর্নামেন্টে স্বাগতিকদের দর্শক বানিয়ে ভারতের সঙ্গে ফাইনাল খেলার বড় প্রেরণা। আট বছর আগের সেই পারফরম্যান্স আজকের ম্যাচ ভালো খেলতে কোনো প্রেরণা দেবে কিনা জানা নেই।
তবে এই সফরে ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচের পারফরম্যান্স উজ্জীবিত করলেও করতে পারে মিরাজদের। যদিও কোচ সালাউদ্দিন বলছেন ক্রিকেট নির্দিষ্ট দিনে ভালো খেলে জিততে হয়। এর কাছে অতীত রেকর্ড মূল্যহীন। তিনি চান ডাম্বুলার মতো কলম্বোতেও তিন বিভাগে ভালো ক্রিকেট খেলে দেশের মানুষকে উৎসবের উপলক্ষ এনে দেবেন ক্রিকেটাররা, ‘আপনি যখন ভালো খেলবেন, জিতবেন, তখনই অনুপ্রেরণা বেশি আসবে। শেষ ম্যাচটি যেহেতু ভালোভাবে খেলেছি, ভালো ম্যাচ জিতেছি। আমার মনে হয় সেটা একটা বড় অনুপ্রেরণা। অতীতে কী করেছি, সেটা খুব বেশি ম্যাটার করে না। কোচ হিসেবে আমি চিন্তা করছি না অতীতে কী হয়েছে। কালকে খারাপ খেললে আবার খারাপ হবে। চেষ্টা করব আমরা যেন আগামীকালের ম্যাচটি ভালো খেলতে পারি।’
প্রেমাদাসার উইকেটের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে খেলালে ভালো করার সম্ভাবনা বেশি। কোচ জানান, বাঁহাতি এ স্পিনারকে খেলাতে হলে লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনকে বাদ দিতে হবে। শেষ ম্যাচের পারফরম্যান্স অনুযায়ী রিশাদকে বাদ দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব না। অলরাউন্ডার কোটায় মেহেদী হাসান মিরাজের খেলাও অনেকটাই নিশ্চিত। তাই গত ম্যাচের একাদশ অপরিবর্তিত রাখা হতে পারে। সহকারী কোচ সালাউদ্দিনের বক্তব্যের সারাংশ অনেকটা সে রকম, ‘কোনো দলই চাইবে না উইনিং কম্বিনেশন ভাঙতে। এ মুহূর্তে নতুনভাবে ভাবার সুযোগও নেই। যে পরিকল্পনায় খেলছি, সেভাবে খেলার চেষ্টা করব। মিডলঅর্ডার ক্লিক করলে আমরা হয়তো ভালো খেলতে পারব।’ পেস বোলিং বিভাগে হাত নাও দিতে পারেন কোচ ফিল সিমন্স। কারণ লঙ্কান দলের শীর্ষ ছয় ব্যাটারের একজন মাত্র বাঁহাতি। ডানহাতি ব্যাটারদের বিপক্ষে বাঁহাতি বোলারদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রিশাদ, মিরাজের বাইরে শামীম হোসেনের অফ স্পিনকেও কাজে লাগাতে পারবেন অধিনায়ক।