নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার হাড়িয়া বৈদ্যপাড়া এলাকায় অবস্থিত “মুনলাইট কিডস গার্ডেন” নামে একটি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে চরম অব্যবস্থাপনা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও অবহেলার মধ্যে চলছে। স্কুলের সামনে-পেছনে জমে থাকা বৃষ্টির পানি, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আবর্জনা, স্যাঁতসেঁতে দেয়াল এবং শিক্ষকদের বৈষম্যমূলক আচরণ কোমলমতি শিশুদের জন্য চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি ও মানসিক চাপ তৈরি করছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, স্কুলের মূল ভবনের আশপাশে পানি জমে থাকে দিনের পর দিন। কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। সেই পানিতে জন্ম নেয় মশা-মাছিসহ নানাবিধ রোগজীবাণু। চারদিকে ছড়িয়ে থাকা পলিথিন, প্লাস্টিক ও পচা-আবর্জনার কারণে পরিবেশে ছড়ায় দুর্গন্ধ এবং জীবাণুবাহিত রোগের আশঙ্কা।
শুধু বাইরের পরিবেশই নয়, স্কুলের ভেতরের অবস্থা আরও উদ্বেগজনক। শ্রেণিকক্ষে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা নেই, ঘরগুলো অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং স্যাঁতসেঁতে। পুরনো দেয়ালে জমে থাকা শেওলা ও আর্দ্রতার কারণে শিশুরা বিভিন্ন চর্মরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। বৃষ্টির সময় টিনের চালার ভাঙা কার্নিশ দিয়ে পানি চুইয়ে ক্লাসরুমের ভেতরে ঢুকে পরে, পাঠদান কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটায় এবং শিশুদের মনোবল ভেঙে দেয়।
এছাড়াও, অভিভাবকদের অভিযোগ, স্কুলের কিছু শিক্ষক প্রাইভেট পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বেশি গুরুত্ব দেন। যারা শিক্ষকদের কাছে টিউশনি করে না, তাদের প্রতি মনোযোগ কম, পাঠদান হয় অবহেলার সুরে। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্যের অনুভূতি তৈরি হচ্ছে এবং অনেকেই শিক্ষাজীবন থেকে আগ্রহ হারাচ্ছে।
একজন অভিভাবক বলেন, “আমরা সন্তানকে স্কুলে দেই শিখবে বলে, কিন্তু এখানে এসে সে প্রায়ই শুধু অসুস্থ হয় আর অনেকটা ভয়ে থাকে। নাই খেলার মাঠ, লেখাপড়া পাশাপাশি মানসক বিকাশে খেলাধুলারও প্রয়োজন আছে।”
এ ব্যাপারে উক্ত স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মো: সোহাগের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান, আনীত অভিযোগ মিথ্যা। আমি একমাস আগে স্কুলটির সকল কাজ নতুন করে করেছি আর বাহিরের ঝোপঝাড় পরিষ্কার সহ পানি নিষ্কাসনের ব্যবস্হা করেছি।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এমন নোংরা ও অব্যবস্থাপনার মধ্যে শিশুদের ডায়রিয়া, টাইফয়েড, ডেঙ্গু, চর্মরোগ, নিউমোনিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি, মানসিকভাবেও শিশুদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, যা তাদের ভবিষ্যতের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
এমন অবস্থায় দ্রুত স্কুলটির অবকাঠামো উন্নয়ন, পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা তৈরি এবং পক্ষপাতমূলক শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের দাবি, কোমলমতি শিশুদের নিরাপদ ও সমতাভিত্তিক শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করুক স্থানীয় প্রশাসন।