আশিকুজ্জামান ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
এবার স্বাধীনতা পদক পাচ্ছেন গৌরীপুরের কৃতি সন্তান ওঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মুক্তিযোদ্ধা ডা. এ. কে. এম. এ মুকতাদির।
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাধীনতা পদক মনোনীত হওয়ার বিষয়টি জানানো হয়। এবার ৯ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও ১ প্রতিষ্ঠানকে ২০২০ সালের স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনীত করেছে সরকার।
পদক মনোনীত অন্যরা হলেন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে পদক পাচ্ছেন- গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক), মরহুম কমান্ডার আব্দুর রউফ, মরহুম মো. আনোয়ার পাশা ও আজিজুর রহমান। চিকিৎসাবিদ্যায় অধ্যাপক ডা. মো. ওবায়দুল কবির চৌধুরী, সাহিত্যে এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদ (মুক্তিযোদ্ধা) এবং সংস্কৃতিততে কালীপদ দাস ও ফেরদৌসী মজুমদার স্বাধীনতা পদক পাচ্ছেন। আর শিক্ষায় ভারতেশ্বরী হোমস প্রতিষ্ঠান হিসেবে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছে। আগামী ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনাতয়নে এ পুরস্কার দেবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডা. এ.কে.এম.এ মুকতাদিরের বিনামূল্যে চিকিৎসা কার্যক্রমের জন্য ইতিপূর্বে তিনি ভারতের তিরুচিরাপল্লীতে এ্যাসোসিয়েশন অব কমিউনিটি অফথ্যালমলোজি ইন ইন্ডিয়া আয়োজিত অনুষ্ঠানে লাইফ টাইম এ্যাচিভমেন্ট এ্যাওয়ার্ড, চক্ষু চিকিৎসা ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৪ সালে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অ্যাওয়ার্ড, ২০০২সালে লায়ন্স এফ্রিসিওয়ান অ্যাওয়ার্ড, ২০০৫সালে এএফএও কর্তৃক ডিসটিংগোয়িং সার্ভিস এ্যাওয়ার্ড, একেদাস এ্যান্ডওমেন্ট এ্যাওয়ার্ড, ২০১৫সালে ভারতে গোল্ডমেডেলসহ দেশ ও বিদেশে ১৯টি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মুক্তিযোদ্ধা ডা. এ.কে.এম.এ মুকতাদির ও তারই সহধর্মিণী ডা. মাহমুদা খাতুনের সহযোগিতায় নিজ জন্মভূমি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামে ২০০৪সনে গড়ে তোলেন নিজ নামে ডা. মুকতাদির চক্ষু হাসপাতাল।
বিনামূল্যের চক্ষু শিবিরে বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধা বঞ্চিত মানুষ ছুটে আসছেন এ চক্ষুশিবিরে।
ডা. মুকতাদির ১৯৭৬ সাল থেকে ২০০৩ সন পর্যন্ত গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে চক্ষু অপারেশন ক্যাম্পে হাজার হাজার মানুষের অপারেশন করেন। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পরে বিনামূল্যে প্রায় ২০ হাজার রোগী চোখের দৃষ্টি ফিরে পেয়েছেন। দৈনন্দিন অপারেশন করা হয়েছে ছানি অপারেশন ৩৭ হাজার ৩শ ৪৩জন, নালি অপারেশন ৪হাজার ৩০২জন, চোখের মাংস বৃদ্ধির অপারেশন ৮৩৮জন, গ্লোকোমার ৬৬৪জন, শিশুদের নেত্রনালির ১হাজার ১৬৪, চোখে পাথর সংযোজন ৬১৮জন, চোখের পাতার অপারেশন ৭২৪জন, গুটি অপারেশন ৮৭৫জন, টিউমার অপারেশন ৫৮৩জন, টেরা চোখ অপারেশন ৭৩জন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, গৌরীপুরের সন্তান মুক্তিযোদ্ধা ডা. একেএমএ মুকতাদির ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ মাত্র ১০শয্যা নিয়ে নিজ গ্রামে এ হাসপাতালের যাত্রা শুরু করেন। সময়ের প্রয়োজনে ক্রমে ক্রমে আরও বর্ধিত করা হয় ৩০টি শয্যা। চাহিদার প্রয়োজনে ৪তলা ভবনে নতুনভাবে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধার কলবরে ১০০শয্যার নতুন হাসপাতালটি এখন মানুষের কল্যাণে নিবেদিত।
হাসপাতালে ভিআইপি রোগীদের জন্য ৩টি এসি কেবিন, ৬টি নন এসি কেবিন, মহিলাদের পৃথক নামাজখানা, রেস্ট রুম, স্টাফ ক্যান্টিন, হাসপাতালের আগত রোগী ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য একটি পৃথক ক্যান্টিন, ডাক্তারদের রেস্ট রুম, ২টি অপারেশন থিয়েটার, মনিটরের মাধ্যমে অপারেশন থিয়েটারের দৃর্শ্য সরাসরি আত্মীয়-স্বজনদের দেখার সুবিধা, প্রতিটি ফ্লোরো আনন্দ বিনোদনের জন্য রঙিন টেলিভিশন। সার্বক্ষণিক ৩জন মেডিকেল অফিসার রোগীদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন।
প্রতি শুক্রবার সার্জিক্যাল টিমের মাধ্যমে ল্যান্স সংযোজন, ছানি অপারেশন ব্যবস্থা। আগত রোগীদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে ২১জন কর্মকর্তা-কর্মচারীও। হাসপাতালে গড়ে তোলা হয়েছে অত্যাধুনিক পরীক্ষাগার। হাসপাতালেই ইসিজি, রক্ত পরীক্ষা, ডায়াবেটিকস, প্রেসার, বায়োমেট্টি, এসপিটিসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. এ.কে.এম এ মুকতাদির জানান, জীবনের সমস্ত অর্জন দিয়ে তিলে তিলে এ হাসপাতালটি গড়ে তোলেন।৪ একর জমির মাঝখানে হাসপাতাল ভবন, সামনে দর্শনার্থীদের জন্য নয়নাভিরাম পার্কের ব্যবস্থা। পাশেই বায়তুল আমান জামে মসজিদ। একটু এগিয়ে গেলেই দেখা যাবে চোখে জুড়ানো হরিণের পাল। পুরো হাসপাতালে ধাপে ধাপে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয়েছে দেশী-বিদেশী কাচ, টাইলস, সৌন্দর্যবর্ধন চিত্র।