“মেঘনা” একটি শান্তিপ্রিয় দ্বীপের নাম

রাব্বি হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

” মেঘনা” নামটি শুনলেই ১৬ কোটি বাঙালির মনেই গর্জে উঠবে উত্তাল ঢেউ আর স্রোতের গর্জনের শব্দ। “মেঘনা” শুধু উত্তাল নদীকেই জানান দেয় না জানান দেয় একটা শান্তি প্রিয়, চির সম্প্রীতির দ্বীপের মানুষদেরও।

কুমিল্লা জেলার ঠিক শুরুতেই চোখে পড়বে চারদিকে থৈথৈ করা পানি, সবুজ গাছপালা, টিনের কাঁচাঘর, সারি সারি নৌকোর মিলন মেলার এক নাম মেঘনা উপজেলা। “মেঘনা” পাড়ের মানুষ গুলোর প্রাণ ভোমর যেন তাদের মানবিকতা।

“মেঘনা” পাড়ে ও সূর্য উঠে, সূর্য ডুবে অন্য সব জায়গার মতোই, তবে এ পাড়ের সূর্যের মহিমা যেন একটু ভিন্নতা বহণ করে। সূর্য উঠার দৃশ্য মেঘনা পাড়ের মানুষ দেখে লাঙ্গল জোয়াল কাঁধে নিয়ে, মাছ শিকারে মত্ত থেকে, মাঠে মাঠে সবজি লালন করে, পুরুষেরা গবাদিপশু তাড়িয়ে খড়ের ঘরে বেঁধে রেখে সূর্য ডোবা দেখে রুপকথা পরীর দেশের মতোই ভাবে। আর মধ্যখানে দুপুর যেন সূ্র্যের আলোর সাথে উজ্জ্বল হয়ে উঠে।

মেঘনা পাড়ের কিশোরেরা শৈশবের দুরন্তপনায় তীর ঘেষে বয়ে চলা “মেঘনার শাখা নদীর” বুকে লাফালাফি ঝাঁপাঝাপি করতে করতে দুপুর পার করে। ঠিক তখন রমণীরা রান্নার তোরজোর, আর বৃদ্ধরা রোদ পোহাতে মত্ত। ঠিক সূর্য যখন মাথা বরাবর, ক্লান্ত কৃষকেরা ঘরে ফিরে, কৃষাণীরা ভালোবাসার পরম যত্নে কৃষকের হাতে তুলে দেয় পানির গ্লাস। কৃষক ও পরম তৃপ্তির চুমুক দেয়। এখানে আধুনিক সকল সুবিধা পেয়েও স্ত্রী তার স্বামীর সেবা থেকে নিজেকে ফিরে নেয়ার আগ্রহ দেখায় না, স্বামী সেবাই তাদের কর্ম। ভদ্রতা, শালীনতা এ পাড়ের মানুষের প্রতিদিনকার আচার-আচরণ।

মেঘনা পাড়ের মানুষ গুলো দিন শেষে সন্ধেবেলা যেন প্রাণ ফিরে পায়, গ্রামের কাঁচা রাস্তায় টং দোকানের আড্ডা তারা ভুলে না, দুঃখ কষ্ট ভাগ করে নেয়ার স্বাদ মেঘনা পাড়ের মানুষ গুলো হৃদয় চিত্তে গ্রহণ করে। প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে তৈরি হয় স্বেচ্ছাসেবক, মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই নদীর কলকল ধ্বনি শুনতে শুনতে বড় হওয়া মেঘনার মানুষ।

রাজনীতি, ধর্মনীতি কোন কিছুতেই পিছিয়ে নেই তারা। ছোট্ট এই মেঘনায় রয়েছে এক ঝাঁক প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, সাংবাদিক। রয়েছে সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। বিদ্যুতের আলোয় যেমন অন্ধকার ঘুচে যায় তেমনি শিক্ষার আলোয় এই পাড়ের মানুষ সদা তৎপর কুসংস্কার, অজ্ঞতা, বেকারত্বের ইতি টানতে। কারন মেঘনায় রয়েছে প্রচুর প্রাকৃতিক ও মানবসম্পদ। মেঘনার মানুষ ভালো করেই জানে কিভাবে সৃজনশীলতা কাজে লাগিয়ে দেশের সম্পদ রক্ষা করতে হয়।

মেঘনা পাড়ের মানুষ ভালোবাসতে জানে, দুঃখ কষ্ট, প্রেম, মায়া, মমতা ভাগ করে নিতে জানে, হতে জানে মহান ত্যাগী। তাইতো হৃদয় বারবার ডেকে বলে”

“মেঘনা”একটি নদীর নাম “মেঘনা” একটি শান্তিপ্রিয় দ্বীপের নাম।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: Content is protected !!