স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের অবদান–ফরিদ হোসেন

স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের অবদান– ফরিদ হোসেন

মহান স্বাধীনতার স্থপতি, বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গী পাড়ায় জন্ম গ্রহন করেন। পিতা শেখ লুৎফর রহমান, মাতা সায়েরা খাতুন। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪২ খ্রিস্টব্দে গোপালগঞ্জ হাইস্কুল থেকে মেট্রিক পাস করে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ভর্তি হন। ছাত্রজীবনে বঙ্গবন্ধু হোসেন শহীদ সোহরওয়ার্দীর সান্নিধ্য লাভ করেন এবং রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ইসলামিয়া কলেজ থেকে ১৯৪৭ সালে বি.এ পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ল’ বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ৪ জানুয়ারী তাঁর নেতৃত্বে পূর্ব-পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ১১ মার্চ তিনি রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলনে গ্রেপ্তার হন। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানীকে সভাপতি, শামসুল হক কে সাধারন সম্পাদক এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে যুগ্ম সম্পাদক করে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলীম লীগ গঠিত হয়। ১৯৫০ খ্রিস্টব্দে শেখ মুজিবুর রহমানকে মুসলিম লীগ সরকার গ্রেপ্তার করে। তিনি জেলে থেকে ১৯৫২ খ্রিস্টব্দের ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৫৩ খ্রিস্টব্দে তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ খ্রিস্টব্দে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে তরুন নেতা শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক আইন সভার সদস্যনির্বাচিত হয়ে কৃষি ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৫৮ খ্রিস্টব্দের ৭ অক্টোবর জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক আইন জারি করে বাঙালির গনতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। তারা শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলে। এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপলদ্ধি করেন যে, বলিষ্ট্ কর্মসূচী ব্যতীত বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না। বাঙালির প্রতি বৈষম্য দূর ও তাদের অধিকার আদায়ের জন্য ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারী লাহোরে ৬ দফা দাবির ঘোষণা করেন। ৬ দফা আন্দোলন স্বল্প সময়ের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করায় সরকার ভীত হয়ে ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গবন্ধুকে প্রধান আসামী করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামালা দায়ের করে। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামীলীগ, ন্যাপ, ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও কমিউনিষ্ট পার্টির গণ অভ্যুত্থানের ফলে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ২২ ফেব্রুয়ারী আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে এবং সকল আসামীকে মুক্ত করে দিতে বাধ্য হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জনতার পক্ষে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেন। ২৪ মার্চ প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান পদত্যাগ করেন। জেনারেল ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হয়ে সাধারণ নির্বাচনের ঘোষনা দেন। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ৭ ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদের ১৬৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি এবং ১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮ টি আসনে আওয়ামীলীগ জয় লাভ করে। নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে জেনারেল ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত করেন। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ দেন এবং ঘোষনা করলেন “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”জয় বাংলা।শুরু হলো অসহযোগ আন্দোলন। ২৬ মার্চ রাতে পাকিস্তানী বাহিনী গণহত্যা শুরু করে। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনা করেন। পাক বাহিনী তাঁকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। বীর বাঙালী জাতি জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। ১৭ এপ্রিল সরকার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলায় শপথ গ্রহন করেন। দীর্ঘ ৯মাস মহান মুক্তিযুদ্ধ চলে। যুদ্ধে ভারত ও সোভিয়ে্ত ইউনিয়ন বর্তমান রাশিয়া বাংলাদেশ সরকারকে সকল সহযোগিতা প্রদান করে। পাক বাহিনীর নির্যাতনে ১ কোটি বাঙালি ভারতে আশ্রয় নেয়। এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ও ভারতের জনগণ বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায়। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ডিসেম্বর ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী মিত্রবাহিনী গঠন করে। ১৬ ডিসেম্বর বিকেল ৪টা ২১মিনিটে পাক হানাদার বাহিনীর ইষ্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক লে.জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী ৯৩ হাজার সৈন্য নিয়ে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরওয়ার্দী ঊদ্যানে) বাংলাদেশ ও ভারতের সম্মিলিত মিত্রবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান সেনাপতি লে.জেনারেলজগজিৎ সিং অরোরার নিকট আত্ম সমর্পন করে। বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান থেকে মুক্তি লাভ করে লন্ডন এবং দিল্লীহয়ে ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং দেশের শাসনভার গ্রহন করে অল্প সময়ের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার পুনর্গঠন,প্রায় ১ কোটি শরণার্থীদের দক্ষতার সাথে পুনর্বাসন, মাত্র ৩৫ দিনের মধ্যে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সৈন্যদেরকে দেশে ফেরত পাঠানো, ১০ মাসের মধ্যে বাংলাদেশের জন্য বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান প্রণয়ন,সংসদীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন,বিঞ্জানভিত্তিক,গণমুখী ও যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য তিনি ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে ড.কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করেন।বঙ্গবন্ধুর গতিশীল ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জোট নিরপেক্ষ নীতি, ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে কমনওয়েলথ, ১৯৭৪খ্রিষ্টাব্দে জাতিসংঘ ও ইসলামি সম্মেলন সংস্থার সদস্য পদ লাভ করে। বিশ্বশান্তি ও বিশ্বমানবতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে ‘জুলিও কুরি”খেতাবে ভূষিত হন।

হাজার বছেরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্বের কারণেই বাঙালি জাতি বিশ্বের বুকে স্বাধীন জাতি হিসেবে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল।

দেশি -বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ১৯৭৫ খ্রিস্টবাদের ১৫ আগষ্ট বাংগালীর মহান নেতা বাংলাদেশের রুপকার শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নির্মম ভাবে শাহাদাৎ বরণ করেন।

ফরিদ হোসেন

সভাপতি: সোনারগাঁও প্রেস ইউনিটি

প্রকাশক: নিউজ সোনারগাঁ টুয়েন্টিফোর ডটকম

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: Content is protected !!